গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার তরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদে নাগরিক সেবা পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। সম্প্রতি সন্তানের জন্মনিবন্ধনের জন্য ওই ইউনিয়নে যান কৃষক মো. আক্তারুজ্জামান, কিন্তু দিনের পর দিন অপেক্ষা করেও ইউপি কার্যালয়ে সেবা পাননি। একই দিনে নাগরিকত্বের সনদ নিতে গিয়ে একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন নাজিম উদ্দিন। কারণ, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নেই, আর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক মাঠপর্যায়ের কাজে ব্যস্ত থাকায় কার্যালয়ে উপস্থিত হতে পারছেন না।
এই চিত্র শুধু তরগাঁও ইউপিতেই সীমাবদ্ধ নয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি, প্রায় ১,৪১৬টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বর্তমানে তাঁদের দায়িত্ব পালন করছেন না। বিভিন্ন কারণে তাঁরা আত্মগোপনে আছেন—কেউ গ্রেপ্তার এড়াতে, আবার কেউ ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য আত্মগোপনে থাকতে বাধ্য হয়েছেন। এতে সরাসরি প্রভাব পড়ছে দেশের সাধারণ নাগরিকদের ওপর, যারা এসব পরিষদ থেকে সেবা পাওয়ার জন্য নির্ভরশীল।
কাপাসিয়াসহ দেশের বিভিন্ন উপজেলার অনেক চেয়ারম্যানই ৫ আগস্টের পরে কার্যালয়ে যাচ্ছেন না। এদের বেশিরভাগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা থাকায় তাঁরা আত্মগোপনে রয়েছেন। ফলে, ইউনিয়ন পরিষদে নাগরিক সেবা কার্যক্রম প্রায় অচল অবস্থায় পৌঁছেছে। চেয়ারম্যানরা অনুপস্থিত থাকায় জন্মনিবন্ধন, নাগরিক সনদ, ওয়ারিশ সনদ, ভাতা বিতরণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ইউনিয়ন পরিষদে প্যানেল চেয়ারম্যান এবং প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হলেও সেটি সবক্ষেত্রে সেবা নিশ্চিত করতে পারছে না। যেমন, ফেনীর ৪৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪০টির দায়িত্ব প্রশাসক বা সহকারী কমিশনার ভূমি (এসি ল্যান্ড) পালন করছেন। তবে তাঁদের অতিরিক্ত দায়িত্ব থাকার কারণে ইউনিয়ন পরিষদের সার্বক্ষণিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক দায়িত্বে প্যানেল চেয়ারম্যান বা নির্বাচিত কোনো জনপ্রতিনিধিকে দায়িত্ব দেওয়া কার্যকর হতে পারে। সাবেক স্থানীয় সরকার সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান এবং স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ এ বিষয়ে মন্তব্য করেছেন যে, প্রশাসক নিয়োগ না দিয়ে যেসব ইউপির চেয়ারম্যান পলাতক, তাঁদের নোটিশ দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিষদে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া উচিত। যদি তাঁরা সেই সময়ের মধ্যে না আসেন, তাহলে তাঁদের পরিবর্তে নতুন জনপ্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে।