দবির মণ্ডল, ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কুলচারা গ্রামের একজন সংগ্রামী মানুষ। মাত্র ৪৫ দিন বয়সে মা এবং ৫ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে, তিনি জীবনের শুরু থেকেই কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছেন। ছোটবেলায় চাচা আবু বক্করের কাছে গরুর রাখাল হিসেবে কাজ করতেন। তবে তাঁর জীবনের কঠিনতম মুহূর্ত আসে যখন একটি দুর্ঘটনায় তিনি একটি হাত হারান।
দুর্ঘটনার পর সংগ্রাম
দবির মণ্ডল যখন মাত্র ১৭-১৮ বছর বয়সে, বাইসাইকেলে করে ধান নিয়ে ঝিনাইদহ শহরে যাচ্ছিলেন। পথে, ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া মহাসড়কের আমতলা নামক স্থানে ট্রাকের ধাক্কায় দুর্ঘটনার শিকার হন। এতে তাঁর ডান হাত এবং মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে। চাচা এবং ট্রাকমালিকের সহায়তায় তিনি চিকিৎসা নেন, কিন্তু তাঁর ডান হাতটি আর কখনো ফিরে আসেনি। এই এক হাতে জীবন চালানোর জন্য তিনি তখন থেকেই সংগ্রাম শুরু করেন।
জীবনধারণের উপায়: ভ্যান চালানো
দবির মণ্ডল তাঁর ভগ্নিপতির কাছ থেকে মাত্র ৫০০ টাকা ধার নিয়ে ডিম কেনাবেচার ব্যবসা শুরু করেছিলেন। কিন্তু এতে তেমন সাফল্য আসেনি। এরপর তিনি এক হাতে ভ্যান চালানো শিখে নেন। ২৭ বছর আগে তিনি ৫ হাজার টাকা ধার নিয়ে একটি ভ্যান কিনেছিলেন, যা ছিল তাঁর জীবিকার প্রধান উপায়। সেই ভ্যান চালিয়ে তিনি তাঁর পরিবারের খরচ চালাতেন। দুই বছর আগে সেই ভ্যানে একটি ইঞ্জিন লাগিয়ে আয়ের পথ আরও সুগম করেছিলেন। তবে ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে তাঁর বাড়ির উঠান থেকে সেই ভ্যান চুরি হয়ে যায়।
চুরির পরের কঠিন সময়
ভ্যানটি চুরি হয়ে যাওয়ার পর দবির মণ্ডল আরও একবার কঠিন সমস্যায় পড়েন। বর্তমানে তিনি অন্যের ভ্যান ভাড়া নিয়ে চালান। এতে যা আয় হয়, তা দিয়ে মালিকের ভাড়া মিটিয়ে সংসার চালানোই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁর আয় থেকে মালিককে ৫ হাজার টাকা দিতে হয়, আর এনজিওর কিস্তি রয়েছে ১২ হাজার টাকা। ফলে সংসারের খরচ যোগাতে তাঁর হিমশিম খেতে হচ্ছে।
আশার আলো: একটি নতুন ভ্যান
দবির মণ্ডলের চার মেয়ে, যার মধ্যে তিনজনকে বিয়ে দিতে গিয়ে তিনি এনজিও থেকে লক্ষাধিক টাকা ঋণ নিয়েছেন। মাসে ১৫ হাজার টাকা আয় হলেও, ঋণের কিস্তি আর সংসারের খরচ মেটানো তাঁর জন্য অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হুজুর আলী জানিয়েছেন, দবির মণ্ডল অত্যন্ত অসহায় একজন মানুষ, যার ভ্যানটি ছিল তাঁর একমাত্র জীবিকার মাধ্যম। যদি তিনি একটি নতুন ভ্যান পান, তাহলে তাঁর এবং তাঁর পরিবারের জীবন বাঁচাতে তা অনেক সহায়তা করবে।
দবির মণ্ডলের এই সংগ্রামী জীবনের কাহিনী সমাজের মানুষের কাছে সহানুভূতির দাবি রাখে। একটি নতুন ভ্যান দিয়ে তাঁকে পুনরায় তাঁর জীবনধারণের সুযোগ করে দেওয়া হতে পারে তাঁর জীবনের নতুন পথচলা।