বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিখ্যাত ভাষণের দিন, এবার জাতীয় দিবসের তালিকা থেকে বাতিল করা হয়েছে, যা দেশের বামদলগুলোকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য করেছে। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) পৃথক বিবৃতিতে তারা এই সিদ্ধান্তকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি এক বিরূপতা হিসেবে অভিহিত করেছেন। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স তাদের বক্তব্যে বলেন, “৪ নভেম্বর সংবিধান দিবস ও ঐতিহাসিক ৭ মার্চকে অস্বীকার করা মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের পরিপন্থী।”
তাদের অভিযোগ, সরকার সম্প্রতি একাধিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে, যা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করেই নেওয়া হচ্ছে। এটি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে। তারা দাবি করছেন, কাজের পরিধি সুনির্দিষ্ট করে অন্তর্বর্তী সরকারকে কার্যক্রম পরিচালনার আহ্বান জানানো উচিত।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ঐতিহাসিক ৭ মার্চকে বাতিল করার সিদ্ধান্তটিকে ‘ভুল’ আখ্যা দিয়ে উল্লেখ করেছে, এটি দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে সরে যাওয়ার প্রতীক। তাদের পলিটব্যুরোর সদস্য কামরূল আহসান বলেন, “একাত্তরের রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা সেদিন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মুক্তি সংগ্রামের আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করেছে।” ৭ মার্চের ভাষণ ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির ঐতিহাসিক ঘোষণা, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে অঙ্গীভূত হয়েছে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “৭ মার্চের গুরুত্ব অপরিসীম এবং এটি অন্যান্য জাতীয় দিবসের সাথে তুলনা করা যায় না।” তার মতে, সরকার যদি এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করে, তাহলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। তিনি এই কথাও উল্লেখ করেন যে, পরিবারকেন্দ্রিক কয়েকটি দিবসের সাথে ৭ মার্চকে গুলিয়ে ফেলার অবকাশ নেই।
সিপিবির নেতাদের মতে, ৭ মার্চের বক্তৃতা ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যা জনগণকে রাজনৈতিক দিশা দিয়েছিল এবং তাদের মুক্তির জন্য প্রস্তুত করেছিল। বর্তমান সরকারের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট পরিবর্তিত হতে পারে এবং এটি জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে।
মোটের ওপর, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের গুরুত্ব অস্বীকার করার এই উদ্যোগ দেশবাসীর মনে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বামদলগুলো সরকারকে তাদের সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছে, অন্যথায় এটি দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অম্লমধুর অধ্যায় হিসেবে রয়ে যাবে।