চট্টগ্রাম অঞ্চলে ২০২৪ সালে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই উদ্বেগজনক রূপ নিচ্ছে, বিশেষ করে ডেন-২ সেরোটাইপের উচ্চমাত্রায় প্রাদুর্ভাবের কারণে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এ বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্তদের ৮৮ শতাংশই ডেন-২ সেরোটাইপের ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত, যা গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। এছাড়াও, ১১ শতাংশ রোগীর মধ্যে ডেন-৩ প্রকরণ পাওয়া গেছে। এই রোগের সংক্রমণ পরিস্থিতি আগের তুলনায় আরও গুরুতর হয়ে উঠছে, বিশেষ করে কসমোপলিটন লিনিয়েজ নামে একটি বিপজ্জনক প্রকরণের কারণে।
২০২৩ সালে চালানো এক গবেষণায় চট্টগ্রামের ডেঙ্গু রোগীদের ৫০ শতাংশের জিনোম সিকোয়েন্সে কসমোপলিটন ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ভ্যারিয়েন্টটি ডেঙ্গুর তীব্রতা ও জটিলতা বৃদ্ধি করতে পারে, যার ফলে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুহারের ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম অঞ্চলে এই ভ্যারিয়েন্টের প্রভাব বেড়েছে, এবং এটি রোগীর সংখ্যা এবং মৃত্যুহারে অবদান রাখছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দুই বছরের দীর্ঘ এই গবেষণাটি ২০২৩ সালের জুন থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পরিচালিত হয়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, এবং এসপেরিয়া হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনসহ আরও বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের রোগীদের ওপর এই গবেষণা পরিচালিত হয়। মোট ১,৫০০ রোগীর ওপর গবেষণাটি করা হয়, যেখানে গবেষকরা ডেঙ্গু সংক্রমণের প্রকৃতি এবং এর তীব্রতা বিশ্লেষণ করেন। গবেষণাটি পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আদনান মান্নান এবং আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী ড. মুস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বাধীন একটি বিশেষজ্ঞ দল।
গবেষণায় চট্টগ্রামের পাঁচটি এলাকা—বাকলিয়া, চকবাজার, কোতোয়ালি, ডবলমুরিং এবং বায়েজিদ বোস্তামীকে ডেঙ্গুর হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব এলাকার ৬০ শতাংশ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বসবাস করেন, যা অঞ্চলটিকে ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থল হিসেবে চিহ্নিত করে। এছাড়া গ্রামাঞ্চলের মধ্যে সীতাকুণ্ড, হাটহাজারী, পটিয়া, বোয়ালখালী ও কর্ণফুলী থেকে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, কসমোপলিটন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ বাংলাদেশে নতুন এবং এর উত্স বিদেশি পর্যটক ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের মাধ্যমে হতে পারে। এই ভ্যারিয়েন্টটির মিয়ানমার ও ভারত থেকে আসার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। সরকার এবং জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের কাছে এই তথ্যগুলো অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে, কারণ জিনোম সিকোয়েন্স বিশ্লেষণ ভবিষ্যতে ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করতে পারে।
চট্টগ্রামের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গবেষণার ফলাফলগুলো এখন আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী মহলে আলোচনা করা হচ্ছে, এবং এটি ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে ভবিষ্যৎ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করতে পারে।