জাতীয় পার্টির (জাপা) ছাত্রসংগঠন জাতীয় ছাত্রসমাজের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. আল মামুন ও সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফুল ইসলাম খান পদত্যাগ করেছেন। বুধবার সকালে পার্টির চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে গিয়ে তাঁরা নিজেদের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। তাঁদের এই পদত্যাগের পেছনে রয়েছে জাপার নীতিগত অস্থিরতা এবং ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে দলটির বর্তমান অবস্থানের সাংঘর্ষিকতা।
দলের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রসমাজের দুই নেতা জাপার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে একটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যাতে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের দোসরদের দল থেকে বের করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু দলের শীর্ষ পর্যায়ে এ ব্যাপারে কোনো সদর্থক প্রতিক্রিয়া না পাওয়ায় তাঁরা পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জাতীয় পার্টির অবস্থান সাংঘর্ষিক হয়ে পড়েছে, যা তাঁদের পদত্যাগের মূল কারণ।
বিগত জুলাই মাসে কাকরাইলে সংবাদ সম্মেলন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে জাতীয় ছাত্রসমাজের নেতা-কর্মীরা দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। এই আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য তাঁদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, এবং এর ফলে অনেক নেতা-কর্মী গ্রেপ্তারও হন। কিন্তু বিজয়ের পর, জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে পার্টির সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে।
এদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন যে, জাতীয় পার্টি বর্তমানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ‘দোসর’ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। এর মধ্যে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যেখানে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপে জাতীয় পার্টিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, যা দলের জন্য বিব্রতকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের এ ঘটনাকে ‘অদ্ভুত’ বলে অভিহিত করেছেন এবং এতে দলের নেতাদের মধ্যে অস্থিরতা বেড়ে গেছে।
রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এ পরিস্থিতিতে ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা তৈরি হওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন। এ সময় ছাত্রসমাজের দুই নেতা পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার পর, জাতীয় পার্টি তাঁদের শূন্যপদ পূরণের লক্ষ্যে নতুন কমিটি গঠন করার ঘোষণা দেয়। এই নতুন কমিটিতে মো. মারুফ ইসলাম তালুকদারকে আহ্বায়ক, মো. আরিফ আলীকে সদস্যসচিব এবং নাজমুল হাসানকে যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে।
এই ঘটনাগুলোতে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্রসমাজের দুই শীর্ষ নেতার পদত্যাগ এবং জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির পরিবর্তনের মাধ্যমে দলটির অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা আরও বাড়ছে, যা ভবিষ্যতে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।