ঢাকার বায়ুদূষণ বর্তমানে এক সংকটজনক অবস্থায় রয়েছে, এবং এর উন্নতির কোনো দৃশ্যমান লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। টানা চার দিন ধরে রাজধানীর বাতাসের মান অস্বাস্থ্যকর রয়ে গেছে, যা শহরের বসবাসকারী নাগরিকদের স্বাস্থ্যের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলছে। এমনকি বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর তালিকাতেও ঢাকার নাম নিয়মিতভাবে উঠে আসছে। আজকের পরিস্থিতি অনুযায়ী, সকালে ঢাকার অবস্থান ছিল সপ্তম। আইকিউএয়ারের বায়ুদূষণ সূচক অনুযায়ী, সকাল ৯টার দিকে ঢাকার স্কোর ছিল ১৬১, যা ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচিত।
বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর তালিকায় ঢাকা
বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার নিয়মিতভাবে শহরগুলোর বাতাসের মান তুলে ধরে, যা একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের বায়ুর বিশুদ্ধতা বা দূষণের অবস্থা জানাতে সাহায্য করে। মঙ্গলবার সকালে বিশ্বের ১২১টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান সপ্তম, যা স্পষ্ট করে যে এই নগরীর পরিবেশ কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। এই সময় পাকিস্তানের লাহোর প্রথম স্থানে ছিল, যার স্কোর ছিল ভয়াবহ ৪১১। ভারতের রাজধানী দিল্লি দ্বিতীয় স্থানে ছিল, স্কোর ২৭০।
বায়ুদূষণের প্রভাবিত মানদণ্ড
আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, স্কোর ৫১ থেকে ১০০-এর মধ্যে থাকলে তা মাঝারি বা গ্রহণযোগ্য মানের বায়ু হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু স্কোর ১০১ থেকে ১৫০ হলে এটি সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর বলে ধরা হয়। এই গোষ্ঠীতে অন্তর্ভুক্ত আছে বয়স্ক, শিশু, অসুস্থ ব্যক্তি ও অন্তঃসত্ত্বা নারী।
অন্যদিকে, স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে, সেটিকে সাধারণ জনগণের জন্যও অস্বাস্থ্যকর বলে বিবেচিত করা হয়। আজকের দিনে ঢাকার স্কোর ১৬১, যা নির্দেশ করে যে এই বাতাস স্বাভাবিক জীবনযাত্রার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া, স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে তাকে খুবই অস্বাস্থ্যকর এবং ৩০১-এর ওপরে হলে দুর্যোগপূর্ণ হিসেবে ধরা হয়।
ঢাকার বায়ুর প্রধান দূষণ উপাদান
ঢাকার বাতাসের প্রধান দূষণ উপাদান হলো পিএম ২.৫ নামক অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণা, যা মানবদেহের শ্বাসতন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্ধারিত মানমাত্রার চেয়ে ঢাকার বায়ুতে পিএম ২.৫-এর উপস্থিতি প্রায় ১২ শতাংশ বেশি, যা নাগরিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলছে।
দূষণের প্রধান এলাকা ও পরামর্শ
ঢাকার যেসব অঞ্চল সবচেয়ে বেশি দূষিত, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্থান হলো হেমায়েতপুর, আরামবাগ এবং আইসিডিডিআরবি অফিস এলাকা। এই অঞ্চলের বাতাস সরাসরি জনস্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে, বিশেষ করে যাদের শ্বাসকষ্ট বা ফুসফুসের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য এই পরিস্থিতি অত্যন্ত বিপজ্জনক।
এই অবস্থায়, আইকিউএয়ার পরামর্শ দিয়েছে, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার এবং বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরার। খোলা জায়গায় ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকা এবং ঘরের জানালা বন্ধ রাখারও সুপারিশ করা হয়েছে।