রাজধানীর মিরপুরে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একটি মতবিনিময় সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ সতর্ক করেছেন যে, দ্রব্যমূল্য জনসাধারণের নাগালের বাইরে চলে গেলে জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতে পারে। তিনি দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিকে “ফ্যাসিবাদের চক্রান্ত” হিসেবে উল্লেখ করেন।
বৃহত্তর মিরপুরের এই সভায় অংশ নিয়ে হাসনাত বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত জিনিসপত্রের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে আনা না যাবে এবং যানজট সমস্যার সমাধান না করা যাবে, সাধারণ মানুষ অধৈর্য হয়ে যাবে।” তার মতে, যদি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনা না যায়, তবে জনগণের অসন্তোষ সরকারের বিরুদ্ধে সড়কে বিক্ষোভে রূপ নিতে পারে।
আবদুল্লাহ আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সব সময় স্বচ্ছতা ও নৈতিকতার পক্ষে রয়েছে। “ফ্যাসিবাদ মুক্তির পথে আমাদের যাত্রা ততক্ষণ সফল হবে না, যতক্ষণ না দেশের ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিলোপ হয়,” বলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, “ফ্যাসিবাদ, বিচারব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা শুনে আমাদের পেট ভরবে না। যখন বাজারে জিনিসপত্রের দাম ঊর্ধ্বগতিতে থাকে এবং আমরা যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকি, তখন আমাদের মনে হয় আগের পরিস্থিতি ভালো ছিল।”
এই সভায় আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম সমবেত ছাত্র-জনতার উদ্দেশে বলেন, “ছোট ছোট ভুল বোঝাবুঝির কারণে আমাদের অভ্যুত্থানের স্পিরিট থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। মনে রাখবেন, আমাদের চ্যালেঞ্জ এখনো শেষ হয়নি।” তিনি বলেন, “জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার আসা না পর্যন্ত ফ্যাসিস্টদের দোসররা বিভিন্ন রূপে সামনে আসবে এবং বিভাজন তৈরি করবে।”
সারজিস মন্তব্য করেন, “যখন টাকার লোভ দেখানো হয়, তখন লুটেরা ও অত্যাচারীরা জনগণের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে। তাই, যারা রাষ্ট্রীয় অত্যাচার ও শোষণের শিকার হয়েছেন, তাদের দিকে নজর রাখতে হবে।” তিনি আহত আন্দোলনকারীদের মামলা করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন।
অন্য বক্তাদের মধ্যে তারিকুল ইসলাম এবং আবদুল কাদেরও বক্তব্য দেন। আবদুল কাদের ৫ আগস্টের পর আন্দোলনকারীদের বিভাজনের জন্য হতাশা প্রকাশ করেন। তারিকুল ইসলাম বলেন, “ফ্যাসিবাদ বিলোপের লড়াই শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব।”
এই সভা থেকে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি যানজট সমস্যার সমাধান না হলে সরকারের বিরুদ্ধে জনসমর্থন বৃদ্ধি পেতে পারে। নেতৃবৃন্দ জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।