বাংলাদেশের রাজনৈতিক আকাশে নতুন একটি বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক হিসেবে মেনে নিচ্ছে না। সচিবালয়ে এক সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, “আমরা বাংলাদেশকে নতুনভাবে গঠন করতে চাই। ফলে ইতিহাসের প্রতি আমাদের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আনতে হবে।”
নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন যে, আওয়ামী লীগ সরকার ‘ফ্যাসিস্ট’ হিসেবে ক্ষমতায় ছিল। তিনি উল্লেখ করেন, “মানুষের ভোটাধিকার হরণ, গুম-খুন এবং গণহত্যার মাধ্যমে তারা ক্ষমতায় এসেছে।” এসব বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি বর্তমান সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে একটি স্পষ্ট চিত্র উপস্থাপন করেন।
আলাপচারিতায় তিনি আরও বলেন, “জাতির জনক বলে যে দাবি করা হচ্ছে, সেটির পেছনে আমাদের একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে মানার প্রশ্নে তিনি এককভাবে মতামত দেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের এই ভূখণ্ডের লড়াইয়ের ইতিহাসে বহু মানুষের অবদান রয়েছে।’”
এই বক্তব্যের মাধ্যমে উপদেষ্টা দেশের ইতিহাসের নানা দিকের কথা উল্লেখ করেন, যেখানে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৪৭ সালের ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রাম, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৯০ ও ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের উল্লেখ করেন। এসব উদাহরণের মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করতে চান যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে অনেকের অবদান রয়েছে এবং বঙ্গবন্ধুর একক অবদান যথেষ্ট নয়।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, “যেসব জাতীয় দিবস বাতিল করা হচ্ছে, সেগুলো চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। এই সরকারের মূল্যায়নে সেগুলো গুরুত্বহীন মনে হয়েছে।”
নতুন সরকারের পরিকল্পনায় গণ-অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে নতুন দিবস উদযাপনের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়। এই ঘোষণাগুলো দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
নাহিদ ইসলামের এই মন্তব্যগুলো দেশের ইতিহাস, রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের ওপর একটি নতুন আলো ফেলছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এটি কেবল একটি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি নয়, বরং দেশের ভবিষ্যত রাজনৈতিক স্রোতেরও ইঙ্গিত দেয়। বর্তমান সময়ের এই বিতর্ক বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে, যেখানে ইতিহাসের পুনর্মূল্যায়ন এবং জাতির পরিচয় নতুন করে রচনা হবে।
এই পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে দেশবাসীর মধ্যে নতুন আশা ও উদ্বেগ উভয়ই দেখা দিয়েছে। জনগণের সচেতনতা এবং রাজনৈতিক সমঝোতা এই মুহূর্তে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর।
যারা বাংলাদেশের ইতিহাস ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আরও জানতে আগ্রহী, তাদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়, কারণ দেশের ভবিষ্যৎ এবং ইতিহাসের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করার সুযোগ এসেছে।