ঢাকা শহরকে আমরা বেশিরভাগ মানুষ সড়ক পথে বা আকাশ পথে দেখে থাকি। কিন্তু নদীপথে ঢাকার অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। একসময় নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল এই নগরী, কিন্তু আধুনিক ঢাকার বেশিরভাগ মানুষ নদীপথের সেই ঐতিহ্য ভুলতে বসেছে। সম্প্রতি একদল অভিযাত্রী, নেতৃত্বে নিয়াজ মোর্শেদ, এই প্রাচীন নৌপথের একটি অংশ ঘুরে দেখেছেন। তাদের মতে, এই নৌপথ সরকারি উদ্যোগে আরও সুপরিকল্পিতভাবে চালু করা হলে ঢাকার মানুষ নতুন এক অভিজ্ঞতার স্বাদ পাবে।
১২ ঘণ্টায় ১০৭ কিলোমিটার
এই বৃত্তাকার নৌপথের দৈর্ঘ্য প্রায় ১০৭ কিলোমিটার, যা ট্রলারে ঘুরে দেখতে প্রায় ১২ ঘণ্টা সময় লাগে। যাত্রাপথটি শুরু হয় টঙ্গী থেকে এবং শেষ হয় একই স্থানে। যাত্রাপথে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নদী ও স্থাপনার পাশ দিয়ে যেতে হয়, যেমন শীতলক্ষ্যা, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু নদী এবং ধলেশ্বরী নদীর কিছু অংশ। প্রতিটি নদীর আলাদা সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা এই যাত্রাকে আরও রোমাঞ্চকর করে তোলে।
নৌযান ও ভাড়া
ট্রলার ভাড়া করে ৩০ থেকে ৪০ জনের একটি দল এই নৌপথে ভ্রমণ করতে পারে। সম্প্রতি নয়জনের একটি দল এই ভ্রমণে ট্রলার ভাড়া করেছে ১৪ হাজার টাকায়। এ ধরনের মাঝারি আকারের ট্রলার নীলামার্কেটের ইছাপুরা এলাকা থেকে ভাড়া করা যায়। মাঝিদের সঙ্গে পূর্বে যোগাযোগ করে যাত্রাপথ ঠিক করা প্রয়োজন, কারণ পুরো বৃত্তাকার নৌপথটি সবার পরিচিত নয়।
ভ্রমণের সময় ও সতর্কতা
নৌপথে ভ্রমণের সবচেয়ে ভালো সময় হলো জুন থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে, যখন নদীতে নতুন পানি থাকে। তবে, বর্ষার সময় নৌযান ও নৌপুলিশের টহল কম থাকে বলে ডাকাতের ভয়ও থাকে। এছাড়া, মালবাহী নৌযানগুলোর সঙ্গে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও থেকে যায়, তাই সবসময় লাইফ জ্যাকেট সঙ্গে রাখা উচিত।
১৮টি সেতুর নিচ দিয়ে যাত্রা
১০৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নৌযাত্রায় মোট ১৮টি সেতুর নিচ দিয়ে যেতে হয়, যার মধ্যে রয়েছে গাবতলীর আমিনবাজার ব্রিজ, বাবুবাজার ব্রিজ, এবং কাঁচপুর ব্রিজ। এই সেতুগুলো ঢাকার বিভিন্ন অংশকে সংযুক্ত করে রেখেছে এবং নদীপথ থেকে এগুলো দেখার অভিজ্ঞতা এক কথায় অসাধারণ।
বিভিন্ন যাত্রাপথের অভিজ্ঞতা
টঙ্গী থেকে সদরঘাটের পথে নদীর দুই পাশের নাগরিক জীবনের ব্যস্ত চিত্র ধরা পড়ে। সদরঘাট থেকে ডেমরা ব্রিজ পর্যন্ত পথজুড়ে প্রচুর কলকারখানা দেখা যায়। তবে ডেমরা ব্রিজ থেকে নীলা মার্কেট পর্যন্ত অংশটি সবচেয়ে সুন্দর। এখানে নদীর চারপাশে প্রকৃতির সৌন্দর্য অসাধারণ, সবুজে ঢাকা এবং প্রচুর পাখপাখালির দেখা মেলে। ৩০০ ফিট থেকে টঙ্গী পর্যন্ত নদী ও খাল মিশে গিয়ে নদীটি চওড়া হয়ে যায়।
এই নৌভ্রমণ ঢাকার জনজীবনের একটি ভিন্ন মাত্রা উপস্থাপন করে।