বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বর্তমানে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। গত বছরের ২৯ জানুয়ারি, রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগের একটি জনসভায় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, “আমরা এই দেশে জন্মেছি, এই দেশে মরব, পালাব না। কোথায় পালাব!”—এটি ছিলো একটি শক্তিশালী প্রতিশ্রুতি। কিন্তু গত ৭ জানুয়ারি, যখন আওয়ামী লীগ চতুর্থবারের মতো একতরফা নির্বাচনে সরকার গঠন করে, তখন পরবর্তী সময়ে ঘটনার মোড় ঘুরে যায়। গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফলে আওয়ামী লীগের সরকার পতন ঘটে। সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যান। এবং তার ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ওবায়দুল কাদের, যিনি একসময়ে রাজনীতির অঙ্গনে শক্তিশালী ছিলেন, আজ নিখোঁজ।
এদিকে, দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে ওবায়দুল কাদেরের কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। গণমাধ্যমেও তার উপস্থিতি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি, তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও কোনো পোস্ট নেই। কাদেরের ‘পালাব না’ বক্তব্য এখন ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, তার উপর নির্মিত গান এবং মিমগুলো নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতা ভারতে চলে গেছেন। তাঁদের মধ্যে ওবায়দুল কাদেরের অবস্থান সম্পর্কে নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। কেউ বলেন, তিনি ৫ আগস্ট যশোর সীমান্ত দিয়ে ভারতে গেছেন, আবার অন্যরা মনে করেন তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থান করছেন। তবে, এর সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
গত আগস্টের ৫ তারিখের পর থেকে কাদেরের অবস্থান নিয়ে দলের নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ এবং হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি একসময় গণমাধ্যমের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকলেও এখন তিনি আড়ালে চলে গেছেন, এবং কেউ তার সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না। একাধিক নেতা জানান, তিনি শেষবার ধানমন্ডিতে ছিলেন, কিন্তু এরপর তার সাথে যোগাযোগ হারিয়ে গেছে। কাদেরের অদৃশ্য হওয়ার ঘটনা দলের ভেতরে সন্দেহ ও বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন কাদেরের এই অদৃশ্যতায়। যখন ছাত্র আন্দোলন উত্তাল, তখন কাদেরও তাদের সাথে বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু তার সাম্প্রতিক অনুপস্থিতি দলের ভেতর বিভক্তি এবং দোষারোপের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। যদিও আওয়ামী লীগের কিছু নেতা বিদেশে থেকেও বক্তব্য দিচ্ছেন, তবুও কাদেরের নীরবতা অনেকের কাছে অবাক করা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে, যখন গণমাধ্যমে কাদেরের অবস্থান নিয়ে আলোচনা চলছে, তখন তার ফেসবুক পেজও অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। সর্বশেষ তিনি ৫ জুলাই একটি পোস্ট করেছিলেন, কিন্তু এরপর আর কিছুই শেয়ার করেননি। তার নিয়মিত উপস্থিতি ছিল, কিন্তু বর্তমানে তার এই দীর্ঘ নিখোঁজতা দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা তৈরি করছে।
দলীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে এই অদৃশ্যতার ফলে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তা স্পষ্ট। এ অবস্থায়, নেতাদের মধ্যে তীব্র অস্বস্তি এবং বিভাজন প্রকট হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে দলের ঐক্যকে চ্যালেঞ্জ করবে। ওবায়দুল কাদেরের রাজনৈতিক জীবন এখন একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, এবং তার ফিরিয়ে আসা না হওয়া পর্যন্ত এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা কঠিন হবে।