সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি বড় প্রশ্ন দেশজুড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে: কবে হবে জাতীয় নির্বাচন? ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের পর ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকার এখনো নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় জানায়নি, তবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মন্তব্যে বিষয়টি নিয়ে জল্পনা-কল্পনা তুঙ্গে।
সম্প্রতি আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এক বেসরকারি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে নির্বাচন আগামী বছরের মধ্যে হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। তার এ মন্তব্যে দেশব্যাপী আলোচনার নতুন জোয়ার উঠেছে। এর আগেই সেনাবাহিনী প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেড় বছরের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন। দুই প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছ থেকে পাওয়া এই বক্তব্য নির্বাচনী আয়োজন নিয়ে জনগণের মনে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
নির্বাচন কবে, কিভাবে হবে?
আওয়ামী লীগ সরকারকে সরিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নতুন মোড় নিয়েছে। দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগ—বিনা ভোটে নির্বাচন, গুম, খুন, দুর্নীতি—এমন নানা ইস্যু জনরোষের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য কাজ করছে।
নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে সরকার ইতোমধ্যে পৃথক সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। কমিটিগুলোকে তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এটি অনুমান করা হচ্ছে যে, সংস্কার প্রক্রিয়া শেষ হলেই নির্বাচন আয়োজন নিয়ে সরকার কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে।
রাজনৈতিক দলের প্রতিক্রিয়া
বিএনপি সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও নির্বাচন নিয়ে নিজেদের ভাবনা তুলে ধরেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সরকারের ভিন্নমুখী বক্তব্যে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এবং জনগণের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও নির্বাচনপূর্ব সংস্কার নিয়ে জোর দিয়েছেন। জামায়াতসহ অন্যান্য দলগুলোও নির্বাচনী সময়সূচি নিয়ে একটি ধারণা পাওয়া গেছে বলে মন্তব্য করেছে।
বিশ্লেষক এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে এখনো সময় আছে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রক্রিয়া শেষ করার। সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবিরের মতে, একটি অংশগ্রহণমূলক এবং টেকসই নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য যথাযথ সংস্কার প্রয়োজন। তবে, এই নির্বাচন কেবল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সুদৃঢ় করার জন্যই নয়, বরং ভবিষ্যৎ ক্ষমতার ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে।
সমাপ্তি নয়, নতুন আলোচনার শুরু
নির্বাচন নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি, তবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মন্তব্য দেশজুড়ে নির্বাচনী আলোচনা উসকে দিয়েছে। সরকার, রাজনৈতিক দল এবং বিশেষজ্ঞরা সকলে মিলে সামনে কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে জনগণ।
এর প্রতিকার বের করতে হবে।