বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের অস্থিরতা নতুন একটি অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে, যখন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ ও সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঢাকার খিলক্ষেত থানায় করা মামলায়, আদালত তাদের তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি প্রদান করেছে। এই ঘটনাটি দেশের বিদ্যুৎ সেবা ব্যবস্থায় গভীর সংকট সৃষ্টি করেছে এবং জনসাধারণের মাঝে উদ্বেগের সৃষ্টি করছে।
মামলার মূল অভিযুক্তরা হলেন মুন্সিগঞ্জের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী মহাব্যবস্থাপক রাজন কুমার দাস, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের উপমহাব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া, কুমিল্লার উপমহাব্যবস্থাপক দীপক কুমার সিংহ, মাগুরার শ্রীপুর জোনাল অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক রাহাত, নেত্রকোনার সহকারী মহাব্যবস্থাপক মনির হোসেন, এবং সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর বেলাল হোসেন। এই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গঠনমূলক অভিযোগ রয়েছে যে তারা বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করেছেন।
শুক্রবার, ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযুক্তদের হাজির করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা আশিকুর রহমান দেওয়ান তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন, তবে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে, গত কয়েক মাস ধরে দেশের গ্রামাঞ্চলের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুই দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। তাদের দাবি হলো আরইবি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একীভূতকরণ এবং অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন। এই আন্দোলনের ফলে বৃহস্পতিবার পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ২০ কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করেছে, যা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করে।
প্রতিবাদের অংশ হিসেবে, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেন সমিতির কর্মচারীরা। এতে গ্রামাঞ্চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েন মানুষ। যদিও রাতে আন্দোলনকারীরা আবার বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করেন এবং রোববার পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন।
এটি একটি সংকটময় মুহূর্ত, কারণ দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যে ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। দেশের মোট বিদ্যুৎ সরবরাহের ৫৫ শতাংশ আরইবির অধীনে। বিদ্যুৎ সরবরাহের এই বিশাল অংশের জন্য এই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবিগুলো যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
বিদ্যুৎ খাতের বর্তমান পরিস্থিতি দেশটির উন্নয়ন এবং জনগণের জীবনযাত্রায় উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। এই পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধানের জন্য সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।