ফরিদপুরের সালথা উপজেলার জয়ঝাপ গ্রামের ইমাম বাড়ি মেলায় ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগ নেতা ওয়াদুদ মাতুব্বরকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। কাশেম ব্যাপারী (২৮) নামের এক তরুণকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করার কারণে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় ১৪ অক্টোবর এক তরুণীকে উত্ত্যক্তের প্রতিক্রিয়া থেকেই বিরোধ শুরু হয়, যা শেষ পর্যন্ত প্রাণঘাতী সংঘর্ষে রূপ নেয়।
নিহতের বাবা পান্নু ব্যাপারী বাদী হয়ে সালথা থানায় ২৯ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রধান আসামি ওয়াদুদ মাতুব্বর ছাড়াও এজাহারে স্থান পেয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। মামলার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে আছেন জাহাঙ্গীর কাজী, বাহাদুর মোল্লা, তৈয়ব মোল্লা ও মো. সোহেল মোল্লা। এই চারজনই হত্যাকাণ্ডের সময় উপস্থিত ছিলেন বলে স্থানীয়রা দাবি করেছেন।
পূর্বশত্রুতার জেরেই হত্যা?
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, পূর্বশত্রুতার জেরে ওয়াদুদ মাতুব্বরের নির্দেশেই কাশেমকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। স্থানীয় রাজনীতির দ্বন্দ্ব এবং আধিপত্য বিস্তারের প্রচেষ্টাকে কেন্দ্র করেই এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। গট্টি ইউনিয়নের দুইটি রাজনৈতিক পক্ষ দীর্ঘদিন ধরে এলাকা নিয়ন্ত্রণের লড়াইয়ে লিপ্ত ছিল, যার মধ্যে ওয়াদুদ মাতুব্বরের নেতৃত্বে একটি পক্ষ ছিল বেশ সক্রিয়। অন্যদিকে বাদশা মিয়ার নেতৃত্বে আরেকটি পক্ষ রয়েছে, যা তুলনামূলক নিষ্ক্রিয় থাকলেও, নতুন নেতৃত্ব নিয়ে আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
রাজনৈতিক ইন্ধনের অভিযোগ
ওয়াদুদ মাতুব্বর এই মামলাকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, ঘটনাটি উত্ত্যক্তকেন্দ্রিক হলেও, প্রতিপক্ষ রাজনৈতিকভাবে তাঁকে ঘায়েল করার চেষ্টা করছে। স্থানীয় বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খায়রুল বাসারের নেতৃত্বাধীন প্রতিপক্ষের ইন্ধনে তাঁকে এবং তাঁর সমর্থকদের মামলায় জড়ানো হয়েছে বলে ওয়াদুদ অভিযোগ করেন। তবে খায়রুল বাসার এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, নিহত কাশেমের পরিবার বিএনপির সমর্থক এবং তাঁরা নিজেরাই মামলার আসামিদের নাম দিয়েছেন।
হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়া ও পরবর্তী ঘটনা
কাশেম ব্যাপারীর হত্যার পর এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বালিয়া বাজারে কয়েকটি দোকান লুটপাট করা হয় এবং কিছু বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। পুলিশ ইতোমধ্যেই এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে এবং অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য তল্লাশি চালাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলন ও চাঁদাবাজির অভিযোগ
এদিকে, মামলায় আসামি করার ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে জাহিদ মাতুব্বর এবং খায়রুল বাসারের বিরুদ্ধে। অভিযোগের প্রতিবাদে বালিয়া বাজারে বিএনপি এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। তবে উভয় দলের নেতারা এই সম্মেলনে নিজেদের অংশগ্রহণের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।