আগামী ২৪ অক্টোবর থেকে দেশের ৭টি বিভাগে শুরু হতে যাচ্ছে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকাদান ক্যাম্পেইন। এ ক্যাম্পেইনের আওতায় ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী ৬২ লাখ ১২ হাজার ৫৫৯ জন কিশোরীকে বিনা মূল্যে এই টিকা প্রদান করা হবে। টিকাদান কর্মসূচিটি জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে এবং ঢাকা ব্যতীত বাকি বিভাগগুলোতে এটি কার্যকর হবে।
এই উদ্যোগের নেতৃত্ব দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই), যাদের সহযোগিতায় রয়েছে ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, এবং গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস (গ্যাভি)। মঙ্গলবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় এই টিকাদান ক্যাম্পেইনের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়। সভায় জানানো হয়, আগামী ১৮ দিনব্যাপী এই কার্যক্রমের প্রথম দুই সপ্তাহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫ম থেকে ৯ম শ্রেণির ছাত্রীদের এবং পরবর্তী সপ্তাহগুলোতে অন্যান্য কিশোরীদের বিনা মূল্যে টিকা প্রদান করা হবে।
জরায়ুমুখ ক্যানসার নারীদের জন্য একটি প্রাণঘাতী রোগ। প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় ৫ হাজার নারী এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। জরায়ুমুখ ক্যানসারের অন্যতম প্রধান কারণ হলো হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস। এটি যৌনবাহিত একটি ভাইরাস, যা শরীরে প্রবেশের পর লক্ষণ প্রকাশ করতে প্রায় ১০ থেকে ১৫ বছর সময় নেয়। তবে, আক্রান্ত নারীদের অধিকাংশই ক্যানসারের চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে শনাক্ত হন, যখন আর কোনো চিকিৎসা কার্যকর হয় না। অথচ, এইচপিভি টিকার একটি মাত্র ডোজ গ্রহণ করেই কিশোরী বয়স থেকেই সারাজীবনের জন্য এই বিপজ্জনক রোগ থেকে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব।
আলোচনা সভায় মাতৃ, নবজাতক, শিশু ও কিশোর স্বাস্থ্য বিভাগের লাইন ডিরেক্টর মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন জানান, এই ভাইরাসের প্রধান বাহক মূলত পুরুষেরা। অল্প বয়সে বিয়ে, বহু গর্ভধারণ এবং প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে অজ্ঞতা জরায়ুমুখ ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই এই টিকা কিশোরীদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
টিকাদান কর্মসূচির নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করতে কিশোরীদের জন্য একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করা হয়েছে, যেখানে ১৭ ডিজিটের জন্মনিবন্ধন নম্বরের মাধ্যমে সহজেই টিকা নিবন্ধন করা যাবে। যাদের জন্ম নিবন্ধন নেই, তারা সরকারিভাবে দ্রুত এই সনদ সংগ্রহ করতে পারবেন।
সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে জরায়ুমুখ ক্যানসারমুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে, এবং এই টিকা ক্যাম্পেইন তারই একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।