বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার জন্য একটি রিভিউ আবেদন করেছেন। ২০১১ সালের ১০ জুন তৎকালীন আপিল বিভাগ ৪:৩ কণ্ঠ ভোটে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে। এই রায়ের ফলে গত ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন রাজনৈতিক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়, যা বিএনপি মনে করে গণতন্ত্রের ওপর আঘাত করেছে এবং একনায়কতন্ত্রের উত্থান ঘটিয়েছে।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি জয়নুল আবেদীন বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, ২০১১ সালের ওই রায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বিপর্যস্ত করেছে এবং ফ্যাসিবাদী শাসনের পথ প্রশস্ত করেছে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি উল্লেখ করেন, ছাত্র আন্দোলনের ফলে ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটে এবং নতুন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের মাধ্যমে জনগণ মুক্তি পায়।
জয়নুল আবেদীন আরও বলেন, ১৯৯১ সালে বিএনপি জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করে। সেই নির্বাচনে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে এবং খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সরকার গঠন হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয় তখন থেকেই, যা গণতন্ত্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর উত্থান ঘটে এবং এরপরই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা বাতিল করা হয়।
তিনি আরো জানান, বিএনপি রিভিউ আবেদনে ১০টি যুক্তি উপস্থাপন করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, আদালতে ঘোষিত সংক্ষিপ্ত আদেশের ভিত্তিতে সংবিধানের সংশোধন এবং প্রধান বিচারপতির অবসরের পর রায় প্রকাশের বিষয়টি। এ ক্ষেত্রে আইনজীবী শিশির মনিরকে বিশেষভাবে নিয়োগ করা হয়েছে।
জয়নুল আবেদীন মনে করেন, গণতন্ত্র এবং অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন একই পরিবারের দুই সদস্যের মতো; একটির অভাব আরেকটিকে অর্থহীন করে তোলে। তিনি বলেন, “সুষ্ঠু নির্বাচন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য একমাত্র গ্রহণযোগ্য মাধ্যম,” এবং এই রায়ের ফলে সংবিধানের মৌলিক স্তম্ভ ধ্বংস হয়েছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন, “সংবিধান একটি জীবন্ত রাজনৈতিক দলিল, যা সময়ের প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন করতে হবে।” বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে তিনি সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পুনর্বিবেচনা প্রয়োজনীয় বলে মন্তব্য করেছেন।
এদিকে, বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল এবং অন্যান্য জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরাও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। এভাবে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তনের জন্য একটি শক্তিশালী দাবি উত্থাপন করেছে, যা ভবিষ্যতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে নতুন দিকে এগিয়ে নিতে পারে।